Online Magazine

যুদ্ধ নাকি!!



ব্যোমকেশ বন্দ্যোপাধ্যায়
Photo Courtesy: Jaya Thakur

পড়ে থাকা রক্ত চেটে খায় কুকুর টা
সমাজ দেখে তার চোখে বিকৃত আয়না
কেঁদে ওঠে সদ্যোজাত শিশু,
বাতাসে আতঙ্ক ছড়ালে দূষণ হয় না।

সাইলেন্সারের মুখে লাগানো জীবন
আজ আর আওয়াজ করা যায় না,
রাতভর খুলে রাখা চোখের পাতার
দিনের হিসেব আর সয় না।

সব শেষে খুলে যায়
স্তেলান ভিন্তীজেনের জন্য কারার দ্বার,
যুক্তিতক্কো শেষ করে মাথাচাড়া দেবে
নতুন কোনো দশকর্ম ভাণ্ডার।।


Read More »

থাকে শুধু অন্ধকার




পুলু বিশ্বাস

Photo Courtesy: Jaya Thakur

রামানুজ একা মানুষ। স্ত্রী গত হয়েছেন বছরখানেক হল, একমাত্র ছেলে বিদেশে থাকে। প্রতিবেশীদের সাথেও খুব ঘনিষ্ঠতা নেই, বাজারে ডাক্তারখানায় যেতে আসতে যেটুকু হাসিমুখের আলাপ, তার বেশি খোঁজখবর কোনো পক্ষেই নেওয়া হয়না। সারাদিনের রান্না আর টুকটাক কাজের লোক বরুণ বিকেলে বাড়ি চলে যাওয়ার পর রামানুজের কাছে সন্ধেগুলো বড্ড লম্বা হয়ে যায়। প্রায়দিনই সময় কাটে স্ত্রীর ছবির সাথে কথা ব’লে।

উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দোতলা  বাড়ির সামনে বেশ বড় আর সুন্দর একটা বাগান। ছেলে কলেজ হস্টেলে চলে যাওয়ার পর থেকে স্ত্রী কাদম্বরীর দিনের অনেকখানি সময় কাটতো এই বাগানে। গোলাপ, জুঁই, নানা রং-এর জবা, লিলি আর হরেকরকম মরসুমি ফুল সারাবছর বাগান জুড়ে থাকত। বাড়ি ঘিরে বেশ কটা নারকেল গাছও আছে।

অবসর নেওয়ার পরে রামানুজ বাড়ির পিছনদিকে একটা ছোট্ট পুকুর কাটিয়েছিলেন। ওখানেই সময় কাটাতেন যখন কাদম্বরী বাগান করতেন

স্ত্রী গত হবার পর এত বড় বাড়ি, এত বড় বাগান ,কে দেখভাল করবে, সেসব নিয়ে অনেক চিন্তা  ভাবনা করে নিচের তলাটা ভাড়া দেবেন বলেই ঠিক করেছিলেন। চেনা এক দালাল মারফত দুজন ভাড়াটে এসে ঘরদোর দেখেছে, স্বামী-স্ত্রী আর এক কন্যার একটি পরিবারের সাথে পাকা কথা আজ বিকেলেই হল। সামনের মাসের পয়লা তারিখে তারা এসে ঢুকবে। তার আগে ঘর পরিষ্কার করানো, ফার্ণিচার দোতলায় সরানো, দেওয়ালের একপ্রস্থ চুনকাম করানো সারতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে অখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।  

ঘুমটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেল ওনার। ঘড়ি দেখলেন বাজে রাত টো। কোনো আওয়াজ-এ ঘুম ভেঙ্গেছে। মনের ভুল ভেবে চোখ বুজতে যাবেন, সিঁড়িতে কারো পায়ের শব্দ শোনা গেল মনে হল। পরপর দুবার মনের ভুলে আওয়াজ শুনছেন? নাহ, দেখতে হচ্ছে ব্যাপারটা।  "কে? কে এসেছ? কথা বলছ না কেন?" এতরকম হাঁকডাকেও কারো উত্তর পাওয়া গেল না। কি করবেন বুঝতে না পেরে টর্চ হাতে চুপ করে বসে থাকলেন কিছুক্ষণ

আজ কাদম্বরী সাথে থাকলে এত চমকাতাম না" মনে মনে ভাবছিলেন।  এবার পায়ের আওয়াজ তাঁর ঘরের বাইরে।
"কে এল রে বাবা এই রাতদুপুরে? চোর নয় তো?"

"বাড়িতে চুরি করার মত কিছুই তো আর নেই। বাপ্পার মায়ের গয়নাগাটি তো সবই বাপ্পাকে দিয়ে দিয়েছি। "
"কিসের আলো ওটা?!!" দরজার নিচের ফাঁক দিয়ে একটা খুব সরু আলোর রেখা ঘরে ঢুকছে।

"কে? কে ওখানে?" মরিয়া হয়ে চিৎকার করলেন রামানুজ।
"আমি গো , আমি "
কাদম্বরী না ??!! হ্যাঁ, কাদম্বরীই তো !!

"তুমি?? কোথায় তুমি??"

 “দেখতে পাচ্ছো না আমায়? এই তো আমি!”

কণ্ঠস্বর কাদম্বরীর।  কিন্তু কাদম্বরী তো এই পৃথিবীর কোথাও নেই।

"কাদম্বরী, তুমি কোথায়?" বলতে বলতে রামানুজ খাট থেকে নেমে পড়লেন।
এবার আওয়াজ এলো  "ডুম ডুম ডুম ডুম "

কিসের শব্দ এটা , মনে হছে কাদম্বরী দরজা ধাক্কাছে।  এই তো, এক্ষুণি এখানেই ছিল।  "কাদম্বরী?" আবার ডাকলেন।
দরজা খুলে দেখলেন কেউ নেই। এমন সময়ে লোডশেডিং। বাইরে ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। হাওয়ার শব্দে বাকি সব আওয়াজ ঢেকে যাচ্ছে, তবুও হাল্কা "ছলাৎছলাৎ" আওয়াজটা শুনতে পেলেন রামানুজ। পুকুরের দিক থেকে আসছে।
কাদম্বরী কি জলে নামলো এই ঝড়বাদলের রাতে? অদ্ভুত মানুষ তো! আগে বোঝা যায়নি ভদ্রমহিলার এসব বদখেয়ালের কথা। তখন সংসারের গণ্ডির মধ্যে ছিলো, এসব শখ মনে পুষে রেখেছিল। এখন ঝাড়া হাত-পা হয়ে মনের সুখে মাঝরাতে পুকুরে নেমেছেন মহারাণী। এই বুড়োটার কথা একবারও যদি ভাবে! যেদিন দুদিনের জ্বরে পড়ে ড্যাংডেঙ্গিয়ে চিতায় উঠলো সেদিনও ভাবেনি বুড়োটা কার কাছে থাকবে, আজও ভাবছে না এই রাত্রে বৃষ্টিতে ভিজলে রামানুজের কি হাল হবে।  ঝিরঝির বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে পুকুরের কাছে এলেন তিনি।

"কাদম্বরী, তুমি কি পুকুরে নেমেছ?" হেঁকে উঠলেন রামানুজ। উত্তরে অস্পষ্ট একটা আওয়াজ এল। জলে নেমে এতটাই মশগুল গিন্নি যে ভাল করে কথা বলারও দরকার মনে করছেন না।

"উফ। তুমি কী? এই রাত্রে কি করছ ওখানে। উঠে এসো এক্ষুণি " রামানুজ অন্ধকারেই এগোলেন।
পুকুরের সিঁড়িগুলো অন্ধকারে ঢাকা , মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।

মনে হচ্ছে কাদম্বরী মাঝ পুকুরে স্নান করছে।

"তোমার কি মাথা খারাপ হয় গেছে? মাঝ রাত্রে পুকুরে নেমেছ? ফিরে এস এখানে। "
কোনো উত্তর না পেয়ে, রামানুজ পুকুরে ঝাপ দিলেন।

"মাথা খারাপ হয়ে গেছে কাদম্বরীর। মারা যাবার পর এরকম হয় নাকি? এই মাঝ রাত্রে পুকুরে নেমেছে " এই ভাবতে ভাবতে সাঁতার কেটে কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।  তিনি যত এগোচ্ছেন, কাদম্বরী তত দূরে চলে যাচ্ছে।

"অতদূরে কেন চলে যাচ্ছো তুমি? আমি আর পারছিনা জল কেটে এগোতে" জলের মধ্যে চিৎকার করে উঠলেন।

সাঁতার কাটতে কাটতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লেও রামানুজ ঠিক করেছেন কাদম্বরীকে না নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না। কিন্তু কাদম্বরী কোথায়?

“ওই তো, ওই পাড়ে উঠেছে মনে হচ্ছে। কতক্ষণ আর সাঁতরাতে পারবে?" সাঁতার কাটতে কাটতে রামানুজ পাড়ে পৌঁছলেন। কিন্তু এ কি! নেই নেই নেই। কাদম্বরী কোত্থাও নেই। আর দম নিতে না পারা শরীরটাকে পাড়ের ওপর ছেড়ে দিয়ে রামানুজ বসে পড়লেন। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল এবার।
“কেন? এলেই যদি, মিথ্যে আশা দিয়ে চলে গেলে কেন? কি দরকার ছিলো এতক্ষণ মজা করার? খুব ভালো লাগছে্‌, না! আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি, তোমায় খুঁজে না পেয়ে বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে আমার, এগুলো দেখে খুব আনন্দ হচ্ছে তোমার, বলো? আমি আর পারছিনা কাদম্বরী, আমায় তোমার কাছে নিয়ে চলো। আর কতদিন?”

ভোর হয়ে আসছে, রামানুজ শুয়ে পড়েছেন পুকুরের পাড়ে। কি হবে আবার ওই দোতলা বাড়িটায় ফিরে গিয়ে? কাদম্বরী তো কোথাও নেই। ঘুম আসছে রামানুজের। ভোরের হাওয়ার আলতো ছোঁয়ায় সে বড় আরামের ঘুম।


রাত্রের ঝড়ে পুকুরপাড়ের নারকেল গাছ থেকে খসে পড়া ডাবগুলো পুকুরের জলে আওয়াজ তুলছে “ছলাৎছলাৎ"।।

Read More »

তিস্তা, তিঞ্চুলে আর বরফ-পাহাড় - (the river and the iced peak)




নিউজলপাইগুড়ি স্টেশনের ওভারব্রী্জ-এ হাঁটছি, হঠাৎ চোখে পড়ল হিমালয়। দূরে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে আমাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে, কাঞ্চনজঙ্ঘা না? এখান থেকেই দর্শন মিলবে, এটা আশাতীত!
যাচ্ছি দিনতিনেকের হঠাৎ-ছুটিতে সিলারিগাঁও। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পং হয়ে ঘণ্টাচারেকের রাস্তা। হিমালয়ের কোলে ৬৫০০ ফিট উচ্চতার এই ছোট্ট গ্রামটা থেকে শুনেছি কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দারুণ লাগে।

কাছাকাছি শহর বলতে প্রায় ৪ কিমি নীচে পেডং, সিলারির বাসিন্দা চব্বিশটি পরিবারের বাজার-হাট, পড়ুয়াদের স্কুল সবই ওই চড়াই-উৎরাই ভেঙ্গে। দিলীপ তামাং ও তাঁর পরিবার তাঁদের হোম-স্টে তে স্নানের গরম জল, লাঞ্চ আর উষ্ণ অভ্যর্থনা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন । আর অপেক্ষায় ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা। যখন পৌঁছলাম তখন সে মেঘের আড়ালে আমাদের সাথে লুকোচুরি খেলতে ব্যস্ত।

বিকেলে চললাম রামিতে ভিউপয়েণ্ট-এর দিকে। পাখির ডাক আর পাতার আওয়াজে ঘেরা একটা স্যাঁতসেতে পায়ে চলা রাস্তায় আমরা চারজন, ডানদিকে তাকালেই দেখতে পাচ্ছি আমাদের খেয়াল রেখে চলেছে বিকেলের আলোয় সেজে ওঠা পাহাড়চূড়োগুলো। রাস্তাটার শেষ রামিতে পয়েণ্টে। ওখান থেকে সামনে তাকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিবারকে একসাথে দেখা যায়, আর নীচে তাকালে পাওয়া যায় তিস্তার চোদ্দোটা বাঁক। পুরো ল্যাণ্ডস্কেপ এককথায় স্বর্গীয়।

পরদিন ভোরবেলায় বারান্দায় এসে দেখি চারপাশ নিস্তব্ধ, সামনে ধ্যানগম্ভীর হিমালয়। আকাশে এক টুকরো মেঘও নেই। তখনো সূর্যের আভা চূড়াগুলোয় আসেনি। বরফে ঢাকা পাহাড়চূড়োগুলো সূর্যস্নানের অপেক্ষায় রয়েছে। একটু পরেই দেখলাম কয়েক মিনিটের ঐশ্বরিক লীলা। কাঞ্চনজঙ্ঘা আর আশপাশের চূড়োগুলোয় সূর্য আলোর মুকুট পরালো, তারপরেই সেই মুকুট সোনা হয়ে গলে ছড়িয়ে পড়ল বরফঢাকা পাহাড়গুলোর গায়ে।

ঘোর একটু কাটতে প্রাতরাশের পর্ব মিটিয়ে দশটা নাগাদ বেরোনো হল সিলারিগাঁও-এর আশপাশ চষে বেড়ানোর জন্য। প্রায় দুশো বছরের পুরনো সানচেনদোরজ়ি মনাস্ট্রিতে কিছুক্ষণ কাটিয়ে পৌঁছলাম সাইলেণ্ট ভ্যালিতে। পাইনের জঙ্গলে ঘেরা সবুজ উপত্যকাটায় পাখির ডাক আর নিজেদের কণ্ঠস্বর ছাড়া সত্যিই আর কোনো আওয়াজ পাচ্ছিলাম না।

পরবর্তী গন্তব্য তিঞ্চুলে একটা ছোট্ট পাহাড়, ঘণ্টাদেড়েক লাগে চূড়ায় উঠতে। আগামী বছর সান্দাকফু ট্রেক করার কথা হচ্ছে, ট্রেকিং-এর হোমওয়ার্কটা এখানেই সেরে নেওয়া যাক ভেবে বুকে বল এনে শুরু করলাম ‘তিঞ্চুলে অভিযান’! ওঠানামার পথে কয়েকবার জিভ বের করে হাঁফানো আর দু’তিন জায়গায় পা হড়কানো ছাড়া আমাদের ‘তিঞ্চুলে জয়’ বেশ ভালোই জমেছিল। বিশেষত চূড়ায় উঠে যখন কাঞ্চনজঙ্ঘা, সিনালচু শৃঙ্গ, জালেপ লা পাস, ভারত, নেপাল, ভূটানের সীমা নির্দেশ করা ভূটাংলা পাহাড় দিয়ে সাজানো ল্যাণ্ডস্কেপ চোখে পড়ল, দেখলাম আকাশ এসে মিশেছে বরফঢাকা পাহাড়গুলোর সাথে, তখন ভুলেই গেলাম একটু আগেই চড়াই বেয়ে উঠতে উঠতে নিজেকে আর তিঞ্চুলে-কে যাচ্ছেতাই গাল পাড়ছিলাম।


এইসব ওঠানামার ফলে লাগামছাড়া ক্ষিধে পেয়েছিলো, দুপুরে চারজনে মিলে প্রায় ছ’জনের খাওয়া খেয়ে সেটা পোষ মানল। তিঞ্চুলে জয়ের ধকল আর শ্রীমতী তামাং-এর মারকাটারি রান্নার গুণে সিলারিগাঁও-এর দ্বিতীয় বিকেলটায় আমাদের আর বেরনো হলো না। বারান্দা থেকেই দেখলাম আস্তে আস্তে রাত জেগে উঠল পাহাড়ের কোল জুড়ে, আর জাগতে থাকা রাতের প্রহরায় রইল বরফঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।

Read More »

আঁধার-আলো


                                                    

                                      আঁধার-আলো
                           ধূপছায়া মজুমদার চক্রবর্ত্তী



আমায় তুমি বারণ করেছিলে                    
                                                    তাই আমি সামনে যাইনা আর
       কোণের এই ছোট্ট ঘরটাতেই                
                                                   আমার এখন সংসার।
       ঘরের জানলা খুললে                                
                                                  দেখি  তোমার রাজপ্রাসাদ
      ওখানে তো শুধুই আলো
                                                 থাকতে নেই বিষাদ।
      আমার ঘরে একলা প্রদীপ
                                                 আলোর থেকে আঁধার বেশি
    তবুও তুমি অবাক হলে,
                                                 দেখে আমার অবুঝ হাসি।
     কিসে যে হয় এত খুশি,
                                                  আমিও সব বুঝিনা গো
     শুধু জানি আসবে কেউ,
                                                  ডাকবে এসে "কে জাগো?"
     অচেনাকে চিনবো যেদিন
                                                   জ্বলবে আলো আমার ঘরে
    তোমার দেওয়া সোনার শিকল
                                                   ভাঙ্গবে সেদিন শব্দ করে।
      স্বপ্নটুকু দেখবে বলেই
                                                   রাত্রি আসে আমার ঘরে
     আমার কাছে মাটির প্রদীপ
                                                   একলা জাগে অন্ধকারে।




                             



Read More »

প্রবাসীর চিঠি

                                                        

                                                        
                                              প্রবাসীর চিঠি 
                                
                                            শ্বেতা রায়চৌধুরী

সুবু রে,

 আজ আমি শস্য শ্যামল সবুজ রূপসী বাংলার থেকে অনেক দূরে কিন্তু মন পড়ে আছে ওখানেই। দুর্গাদালানে রথের দিনে কাঠামো পূজো, তার উপর মাটি দিয়ে দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী রূপ আর মহালয়াতে দেবী পক্ষের সূচনার শুভ লগ্নে দেবীর চোখ আঁকা, সব বেশ উপভোগ করছিস, কি বল। আর আমি! সেই সব থেকে বহুদূরে বসে ফেলে আসা দিনের স্মৃতি রোমন্থন করছি।

আজ যেন বেশি করে মনে পড়ছে সেই ছোটবেলার কথা। সেই কাঠামোতে মাটি লাগানোর দিন থেকে শুরু হত আমাদের দুর্গাদালানে যাতায়াত। পালজেঠু কি করলেন সেই দেখতে প্রায় দিনই ভিড় করতাম। নীল আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা দেখলেই আর স্কুলে বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকতে ভাল লাগতো না। মনে হত ওই সাদা মেঘের মত করে উড়ব। তারপর ক'দিন, সে কি আনন্দ!

সোনালী হয়ে আসা ধানের ক্ষেত আর সাদা কাশ ফুল দেখলেই বুঝতাম পুজো আসছে। বাবার দেওয়া নতুন জামাটার গন্ধ শুঁকতাম বার বার। পুজোর পাঁচটা দিন যে কোনদিক দিয়ে চলে যেতো কে জানে... কোন বাধা নেই, বারণ নেই, পড়া নেই... শুধুই মুক্তির গন্ধ। মনে পড়ে? অষ্টমীর দিন প্রত্যেকবার তোর, আমার আর তিতিরের উপর ফুল তোলার ভার দেওয়া থাকত। শিউলি, টগর আরও কত ফুল তুলতাম আমরা। সন্ধ্যারতির সময় ধুনুচি নৃত্য আর রাত জেগে নাটক দেখা– আজ যেন সব গল্প মনে হয়।

দশমীর দিনটা একটু মন খারাপ করত কিন্তু বিজয়ায় মিষ্টির লোভটা যেন সেটা একটু কম করে দিত। আর বিসর্জনের সময় কি খারাপই না লাগতো মনটা! মনে হত নিজের মা-ই দূরে কোথাও চলে যাচ্ছে অনেক দিন বাদে ফিরবে। এই অনেক দিন বাদে ফিরে আসবে এই আশা নিয়ে আবার পরের পুজোর অপেক্ষা করতাম।

এখানেও পুজো হয়। খুব ভক্তি ভরেই হয়। সবাই পুজোর কটা দিন আনন্দেই কাটাই। কিন্তু বাংলার সব কিছুই খুব আপন। দূর্গাপুজোর সময় নীল আকাশ থেকে ছোট্ট ঘাসও নিজেদের সুন্দর করে সাজায়। সকলের স্বতঃস্ফূর্ত মনের আবেগ মিলে মিশে একাকার হয় এই পুজোর সাথে। এখানে আমরা পুজো কবে জানি ক্যালেন্ডার দেখে। আর তোরা জানিস প্রকৃতির সাজ সাজ রবে, নির্মেঘ নীল আকাশটা দেখে।

আমার চিঠি পড়তে পড়তে হয়ত ভাবছিস আমি বদলে যাওয়া সময়ের কথা ভুলেই গেছি। জানি রে এখন মানুষের মনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সাজগোজ, জামাকাপড়, প্রতিমা, প্যান্ডেল সবই বড্ড বেশি বাণিজ্যিক। শহরে এখন একটা রুমালের মাপের ঘোলাটে আকাশ দেখা যায়। শিউলি, কাশ চাপা পড়ে গেছে বহুতল বাড়ির ভিড়ে। আর গ্রামের দারিদ্র‍্য ঢেকে দিয়েছে শরৎকালের গ্রামীণ সৌন্দর্য। এতটা বাণিজ্যিক হওয়ার পরও কোথাও যেন একটা পুজোর গন্ধ, মনের আবেগ আর প্রাণের টান এখনও আছে।

বার বারই মনে পড়ছে ছোটবেলায় পড়া রবিঠাকুরের কবিতাটা–
যেদিকে তাকাই সোনার আলোয়
দেখি যে ছুটির ছবি
পূজার ফুলের বনে ওঠে ওই
পূজার দিনের রবি।।

এবারে আর যাওয়া হলো না রে। ছুটি পেলামনা। তুই খুব আনন্দ করিস পুজোয়। বাড়িতে দূর্গাপুজো কেমন হল জানাবি।

শুভ শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল।

                                                                                  – তোর প্রবাসী বন্ধু মিঠাই ।।

Read More »

নিজেদের শহরের কথা জানাও ইপিল-কে






এবার তোমাদের কাছে নতুন অনুরোধ নিয়ে এলাম।

পুজো আসছে। আমাদের সবার শহরই সেজে উঠছে নিজের মতন করে। সেজে ওঠা শহরগুলোর আটপৌরে চেহারা কেমন? নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আর রূপ নিয়ে বিভিন্ন শহরের সারাটা বছর কাটে কেমন করে?

কোনো শহরের পাশেই সমুদ্র, কোনো শহরের সঙ্গী হাজার বছরের পুরনো ইতিহাস। কোনো শহর আবার হয়তো জিভে জল আনা কোনো স্বাদের জন্মস্থান। নানা রঙের এইসব শহরে ছড়িয়ে আছো তোমরা,  ইপিল-এর বন্ধুরা।

তোমরা নিজেদের মন-কলমে নিজেদের শহরের কথা লিখে ইপিলকে জানাও। 'আমার শহর'- এই শিরোনামে বিভিন্ন শহরের কথকতা ইপিলের মাধ্যমে পৌঁছে যাবে কাছে-দূরের আরো অনেক বন্ধুর কাছে।

লেখা পাঠাও এই Email ID তেঃ eepil.thestar@gmail.com



Read More »

বর্ষার ছবি


আয় বৄষ্টি ঝেঁপে
Photo by Prasun Ghatak

গগনে গরজে মেঘ...
Photo by Prasun Ghatak



Read More »